Monday, June 24, 2013

আয় রোজগার নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন

আসসালামু আলাইকুম◄

►যারা নিজেদের আয় রোজগার নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন তারা নিচের আয়াতটি পড়ুন। আপনার চিন্তা অনেক কমে যাবে, ইনশাল্লাহ্‌◄

আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা’আলা কে ভয় করে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর জন্য (সংকট থেকে বের হবার) একটা পথ তৈরি করে দেন,
এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যার সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা’আলার উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলাই যথেষ্ট। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা নিজের কাজটি পূর্ণ করেই নেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রতিটি জিনিসের জন্যই একটি পরিমাপ ঠিক করে রেখেছেন।”
[সূরা আত্‌ তালাক্ব, আয়াত ২-৩]

বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড।

- নামাযী বয়ফ্রেন্ড।
- হিজাবী গার্লফ্রেন্ড।
- দ্বীনদার স্বামী চাই! * শর্ত প্রযোজ্য
- দ্বীনদার স্ত্রী চাই! * শর্ত প্রযোজ্য
...
- টাখনুর নিচে প্যান্ট পরে আমার মধ্যে কোন অহংকার কাজ করেনা। তাই টাখনুর উপর প্যান্ট না পরলেও চলে।
- পর্দা করার দরকার নাই। মনের পর্দাই বড় পর্দা ।
- আমি মুভি দেখি বিনোদনের জন্য কিন্তু যখন মুভিতে উলঙ্গপনা মুহূর্ত আসে তখন আমি চ্যানেল চেঞ্জ করে ডিসকভারিতে জীব-জন্তু দেখি।
- হিন্দি সিরিয়াল দেখা যায় কারন এতে খারাপ কিছু দেখায়না , বরং সংসার সম্পর্কে অবিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

মুরগী ও ইলিশ মাছের জোল কে মিক্স করে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত কপচাইলে যা হয় বর্তমানে আমরা ইসলাম কে একইভাবে কপচানোর চেষ্টা করছি। ইচ্ছামত কেটে-ছেঁটে নিজেদের মত করে পালন করে যাচ্ছি। ইসলাম আপনার পৈতৃক সম্পক্তি নয় যে, আপনি আল্লাহর দেয়া বিধানকে কাটছাঁট করে মনের মত করে পালন করবেন। হাশরের ময়দানে নিজ নিজ কর্মের জবাবদিহির কথা ভেবে মনের মধ্যে আল্লাহর প্রতি ভয় পুরোপুরি কাজ না করলে চুপ থাকুন, কিন্তু ইসলাম কে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার কোন অধিকার আপনার নাই এবং আল্লাহ তা বরদাশত করেবন না।

হজ্জের ওয়াজিব ও সুন্নাতসমূহঃ-

হজ্জের ওয়াজিবসমূহঃ-

১. আরাফাত থেকে ফেরার পথে মুযদালিফায় অবস্থান করা এবং সেখানে মাগরিব ও এশার নামায এক সাথে আদায় করা।
২. সাফা ও মারওয়ার মধ্যখানে সা’ঈ করা।
৩. ‘রামীয়ে জেমার’ বা জামরাহগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করা।
৪. ক্বিরান ও তামাত্তু কারী হাজীদের ক্বোরবানী করা। এর অপর নাম দমে শোকরিয়া, দমে মাতাত্তু ও দমে ক্বিরান।
৫. মাথা মুন্ডানো কিংবা চুল ছাঁটানো।
৬. আ-ফাক্বী অর্থাৎ মীক্বাতের বাইরে থেকে আগত হাজীদের জন্য ‘তাওয়াফে বিদা’ (বিদায়ী তাওয়াফ) করা।
‘ওয়াজিবাত’ এর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হচ্ছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন ওয়াজিব বাদ পড়লে হজ্জ তো হবে; কিন্তু দম দিতে হবে, অবশ্যই কোন গ্রহণযোগ্য ওযর বশতঃ হজ্বের ওয়াজিব বাদ পড়ে থাকলে দম দিতে হবে না।

হজ্বের সুন্নাতসমূহঃ-

১. ক্বিরান ও ইফরাদকারী এবং আ-ফাক্বী হাজীদের জন্য তাওয়াফে ক্বুদূম করা ।
২. তাওয়াফে ক্বুদূমে রামাল করা । যদি এতে রামাল করা না হয়, তবে অন্ততঃ তাওয়াফে যিয়ারত বা তাওয়াফে বিদায়ে তা করে নেবে।
৩. তিনটি স্থানে অর্থাৎ ৭ জিলহজ্জ মক্কা মুকাররমায়, ৯ জিলহজ্জ মসজিদে নামরায় নামাযের পূর্বে ও ১১ জিলহজ্জ মিনায় ইমাম কর্তৃক খুতবা প্রদান করা ও হাজীদের তা শ্রবণ করা।
৪. ৮ জিলহজ্জ দিবাগত রাতে মিনায় অবস্থান করা।
৫. ৯ জিলহজ্জ সূর্য উদয়ের পরই আরাফাতের দিকে রওয়ানা হওয়া।
৬. ইমামের পরে আরফাতের ময়দান থেকে প্রত্যাবর্তন করা।
৭. আরাফাত থেকে পত্যাবর্তনের পর রাতে ফজর হওয়া পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।
৮. আরাফাতে গোসল করা।
৯. মিনায় অবস্থানকালে সেখানে রাত্রিযাপন করা।

জান্নাতে প্রবেশের চাবী সমূহ

জান্নাতে প্রবেশের চাবী সমূহ 

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করাঃ

((اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ )

উচ্চারণ:“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে কেউ ইয়াকিনের সাথে দিনের বেলা এই দুআ পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।” (বুখারী)

শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বণির্ত সহীহ হাদীস সমূহ:

শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বণির্ত সহীহ হাদীস সমূহ:

শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কীত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল:

ক) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রামাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”[1]

খ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা সল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।[2]

গ) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন: “রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”[3]

ঘ) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বণির্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রাখিও না।” [4] এ হাদীসের অর্থ হল: যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম থেকে রোযা রাখে নি সে যেন অর্ধ শাবানের পর আর রোযা শুরু না করে করে। তবে যে ব্যক্তি শাবান মাসের শুরু থেকে রোযা রেখেছে, বা যার উপর গত বছরের রোযা কাজা আছে অথবা যার প্রতি সোম ও বৃহ:বার রোযা রাখা অভ্যাস সেও পনের তারিখের পর রাখতে পারে।

ঙ) কারো যদি রামাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে। যেমন, আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি, আমার রামাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[5]অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন

কুরআনে বর্ণিত পঁচিশজন নবী হলেন :

কুরআনে বর্ণিত পঁচিশজন নবী হলেন :
→ ০১ : হযরত আদম আ:
→ ০২ : হযরত নূহ আ:
→ ০৩ : হযরত ইদরীস আ:
→ ০৪ : হযরত হূদ আ:
→ ০৫ : হযরত ছালেহ আ:
→ ০৬ : হযরত ইবরাহীম আ:
→ ০৭ : হযরত লূত আ:
→ ০৮ : হযরত ইসমাঈল আ:
→ ০৯ : হযরত ইসহাক আ:
→ ১০ : হযরত ইয়াকূব আ:
→ ১১ : হযরত ইউসুফ আ:
→ ১২ : হযরত আইয়ূব আ:
→ ১৩ : হযরত শু‘আয়েব আ:
→ ১৪ : হযরত মূসা আ:
→ ১৫ : হযরত হারূণ আ:
→ ১৬ : হযরত ইউনুস আ:
→ ১৭ : হযরত দাঊদ আ:
→ ১৮ : হযরত সুলায়মান আ:
→ ১৯ : হযরত ইলিয়াস আ:
→ ২০ : হযরত আল-ইয়াসা‘ আ:
→ ২১ : হযরত যুল-কিফ'ল আ:
→ ২২ : হযরত যাকারিয়া আ:
→ ২৩ : হযরত ইয়াহ্ইয়া আ:
→ ২৪ : হযরত ঈসা আ:
→ ২৫ : হযরত মুহাম্মাদ (সা: )

এই যে চাচা,

এই যে চাচা, 

কি ধরনের ছেলে আপনার??
দেখলাম ও মেয়েদের দেখলেই সিস দেয়। খারাপ চোখে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
যখনি ওকে রাস্তায় দেখি তখনি দেখি মেয়েদের ইভটিজিং করতে।

আর আপনার মেয়ে ওত সাঙ্গাতিক। 
আপনার মেয়ের জন্য আমি রাস্তায় বেড় হতে পারি না!
তাকে আপনি কি এইসব ছোট কাপড় ই কিনে দেন??
নাকি আপনার লজ্জাবোধ হয় না!!

কেমন করে এমন ছেলে বানালেন।
যার জন্যে অনেক মেয়েরা আজ রাস্তায় বের হতে পারে নাহ।
আর
কেমন করে এরকম নির্লজ্জ মেয়েও তৈরী করলেন??
যে কিনা আরো দশটা ছেলেকে ভুল পথে ডাকছে!!

পাঁচটা option-এর যে কোন একটা পূরণ করতে পারলে পাপ কাজের অনুমতি দেবঃ-

পাঁচটা option-এর যে কোন একটা পূরণ করতে পারলে পাপ কাজের অনুমতি দেবঃ-

একদিন এক লোক হযরত হুসাইন (রা.)-এর কাছে আসল। সে বলল,"আমি কিছুতেই পাপকাজ ছাড়তে পারছি না। আমকে কিছু উপদেশ দিন।"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে। আমি তোমাকে পাঁচটা option দিব। তুমি যদি এই পাঁচটা option-এর যে কোন একটা পূরণ করতে পার, আমি তোমাকে পাপকাজ করার অনুমতি দেব।"। লোকটা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল, "আচ্ছা,আমাকে বলুন।"।

১. হুসাইন (রা.) বললেন, "যখনই তুমি একটা পাপ করতে যাবে, সেটা আল্লাহ তোমাকে খাদ্য ও পানি দ্বারা যে শক্তি দিয়েছেন, সেটা বাদে অন্য কোন শক্তি দিয়ে করবে।"! লোকটা বলল, "এটা কীভাবে সম্ভব? পৃথিবীর সব খাদ্য ও পানিই তো আল্লাহর দান!"।

২. হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে, দেখ তো এটা পার কি না! যখনই একটা পাপ করতে যাবে, সেটা আল্লাহর যমীনের বাইরে গিয়ে করবে!"। লোকটা বলল, "তা তো কোনক্রমেই সম্ভব না। পুরা যমীনের মালিক তো আল্লাহপাক।"!

৩. হুসাইন (রা.) বললেন, "ঠিক আছে, দেখ তো এটা সম্ভব না কি! যখনই একটা পাপ করতে যাবে, সেটা আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে গিয়ে করবে,যেন তিনি তোমাকে না দেখেন!"। লোকটা বলল, "এটা তো অসম্ভব! আল্লাহ তো আল-রাকিব (সর্বদ্রষ্টা)! তার দৃষ্টির বাইরে কেউ যেতে পারে না!"।

৪. হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা, তাহলে দেখ তো, এটা সম্ভব হয় কি না! যখন মালাকুল মাউত তোমার জান কবজ করতে আসবেন, তাঁকে বলবে, 'আমি এখন যেতে পারব না! আমার কাজ এখনও বাকি, আপনি পরে আসুন!" লোকটা বলল, "এটা তো কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না!"।

৫. হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা, অধৈর্য হয়ো না! আরও একটা option তো বাকিই আছে! আচ্ছা,তাহলে তোমাকে যখন জাহান্নামে ঢোকানো হবে, তখন তুমি বরং বের হয়ে এস, কেমন?"।

লোকটা বলল,"আর বলবেন না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি আর পাপ করব না!"।

চোখের পানি দোজখের আগুন নিভিয়ে দিবে

চোখের পানি দোজখের আগুন নিভিয়ে দিবে ।

ইমাম আদমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) হযরত হাযেম (রাঃ) নামক জৈনেক সাহাবীর বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, একদা জিবরাইল (আঃ) নবী করিম (সা:) এর নিকট হাজির হয়েছিলেন । এ সময় মসজিদের এক কনে বসে এক বেক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করছিলেন ।

লোকটির ক্রন্দন দেখে জিবরাইল (আঃ) বললেন, মানুষের সকল আমলই ওজন হবে । কিন্তু আল্লাহ্‌র ভয়ে ক্রন্দন করা এমন এটি আমল যা ওজন করা হবে না । এই ক্রন্দনের দ্বারা নির্গত এক ফোটা অশ্রু জাহান্নামের জলন্ত আগুন নিভিয়ে দিবে ।

(তফসিরে মাআরেফুল-কুরআন ৩য় খণ্ড)

একটি বাস্তব ঘটনা

একটি বাস্তব ঘটনা, আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।।

একজন মৃত্যুপথযাত্রী মহিলা হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলেন।। তার ছেলে, আত্মীয়-স্বজন সবাই তার পাশেই ছিলো।। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মহিলাটি মারা যান।। সবাই শোকে কাতর।। তার
ছেলে সারাদিন কান্না করে নিজেই অসুস্থ হয়ে যায়!!

ছেলেটি পরেরদিন ঘরে এসে যখন মায়ের আলমারি খুলল এবং দেখল একটা চিঠি আর কিছু ওষুধ!!

চিঠিতে লিখা ছিলোঃ "ওষুধ গুলো খাস বাবা!! আমি জানি তুই কান্নাকাটি করলে তোর
ঠাণ্ডা লেগে যায়!!"

মায়ের ভালোবাসা আসলেই পরিমাপ করা যায় না।। সে ভালোবাসার কোন তুলনা হয় না।।

পিতামাতার ঋণ কখনো শোধ করার নয়।।

আসুন প্রার্থনা করি যেন আমাদের কারনে বাবা-মায়ের কষ্ট না হয় এবং তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কমতি না হয় আমৃত্যু পর্যন্ত।।

একটি অসাধারণ শিক্ষণীয় ঘটনাঃ

একটি অসাধারণ শিক্ষণীয় ঘটনাঃ

একদিন ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ও তার পুত্র তাদের বাগানের একটা বেঞ্চে বসেছিল। হঠাৎ একটি কাক এসে বসলো, তার পিতা জিজ্ঞেস করলেন,
"এটা কি?"
পুত্র বলল- "এটি একটি কাক".

কয়েক মিনিট পর, পিতা আবার জিজ্ঞেস করলেন , "এটা কি?
পুত্র বলল - "আমি তো কেবলি বললাম এটা একটা কাক ।"

একটু পর আবার পিতা জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কি ?"
এবার পুত্র অনেকটা বিরক্ত হয়েই কর্কশ গলায় বলল , "এটা একটা কাক, এটা একটা কাক।"

এবার পিতা ৪র্থ বারের মত জিজ্ঞেস করলেন "এটা কি ?"

এবার পুত্র প্রচণ্ড রেগে গেল, রাগের চোটে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে পিতাকে ধমক দিয়ে বলল "তুমি কেন বার বার আমাকে একি কথা জিজ্ঞেস করছ? আমি তো তোমাকে বহুবার বললাম এটা একটা কাক, এটা একটা কাক, চোখ নেই তোমার, বুঝতে পার না? "

বৃদ্ধ পিতা কোন কথা না বলে তিনি হেঁটে হেঁটে চলে গেলেন । একটু পর ফিরে এলেন একটা ডায়রি সাথে নিয়ে । তিনি তার পুত্র কে বললেন "এটা পড়, মনোযোগ দিয়ে পড়বে ।"

"আজ আমি আমার ৩ বছর বয়সী ছেলের সাথে বাগানের বেঞ্চিতে বসেছিলাম । হটাৎ একটা কাক এসে বসলো । আমার ছেলে আমাকে ২৩ বার জিজ্ঞেস করল "এটা কি?" আর আমি ২৩ বার উত্তর দিলাম "এটা একটা কাক।" তাকে প্রতিবার উত্তর দেবার সময় তাকে গভীর ভালবাসায় জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার পুত্র আমাকে একি প্রশ্ন ২৩ বার জিজ্ঞেস করেছে এবং আমি একটুও বিরক্ত বোধ দেখাইনি আমার নিস্পাপ ছেলেটার প্রতি।"

পুত্রের চোখের কোনে জল জমতে শুরু করল। পুত্র ডায়রিটা বন্ধ করে গভীর ভালবাসায় তার পিতাকে জড়িয়ে ধরল । আর ধরা গলায় বলল "Sorry BaBa".

অনেক সময়ই আমরা আমাদের বাবা-মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করি, উচু গলায় কথা বলি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন কি পরিমান ভালবাসা আর কষ্ট করেছেন তারা আমাদের বড় করার জন্য? পৃথিবীর কোন কিছু দিয়ে কি তাদের এই ঋণ শোধ করা সম্ভব ??

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডারের অদ্ভুত অভিপ্রায়

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডারের অদ্ভুত অভিপ্রায় ।-

মৃত্যুশয্যায় আলেকজান্ডার তাঁর সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে।
এতে যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।

আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে, শুধু আমার চিকিৎসকেরা আমার কফিন বহন করবেন।

আমার দ্বিতীয় অভিপ্রায়, আমার কফিন যে পথ দিয়ে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই পথে আমার কোষাগারে সংরক্ষিত সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান পা...থর ছড়িয়ে দিতে হবে।

আমার শেষ অভিপ্রায়, আমার কফিন বহনের সময় আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’

তাঁর মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত লোকজন মহাবীর আলেকজান্ডারের এই অদ্ভুত অভিপ্রায়ে বিস্মিত হন।
কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ।

তখন তাঁর একজন প্রিয় সেনাপতি তাঁর হাতটা তুলে ধরে চুম্বন করে বলেন, ‘হে মহামান্য, অবশ্যই আপনার সব অভিপ্রায় পূর্ণ করা হবে; কিন্তু আপনি কেন এই বিচিত্র অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন?’

দীর্ঘ একটা শ্বাস গ্রহণ করে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই।

আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলেছি এ কারণে যে, যাতে লোকে অনুধাবন করতে পারে চিকিৎসকেরা আসলে কোনো মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারেন না।
তাঁরা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে কাউকে রক্ষা করতে অক্ষম।

‘গোরস্থানের পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা বোঝাতে যে ওইসোনা-দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে যাবে না।
আমি এগুলো পাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছি,কিন্তু নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না।
মানুষ বুঝুক’ ধন-সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় মাত্র।

কফিনের বাইরে আমার হাত ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা জানাতে যে খালি হাতে আমি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।...

হিবা আম্মার নামে এক বোন লিখেছেন

হিবা আম্মার নামে এক বোন লিখেছেন

যখন আমার বাবা আমার মা কে প্রপোজ করেছিলেন তখন তিনি আম্মুর প্রতি মাহার হিসেবে সুরা আলে ইমরান উৎসর্গ করেছিলেন, সম্পূর্ণ সুরাটি তিনি হৃদয় ও মন দিয়ে মুখস্থ করেছিলেন।

যখন আমার বর আমাকে প্রপোজ করেছিলো, আমার বাবা তাঁকে বলেছিলেন যে মাহার হিসেবে তাঁকে কুরআন থেকে একটি সুরা মুখস্থ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি আমার মাহার না পাবো ততক্ষণ বিয়ে হবে না।

আমাকে আমার মাহার হিসেবে একটি সুরা পছন্দ করতে বলা হল। আমি সুরা নুর পছন্দ করলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে এই সুরাটিতে যতসব আইন আছে তা আমার হয়ে যে কারো জন্য মুখস্থ করা কঠিন ছিল।

আমাদের বিয়ের আগে, যখন আমরা নতুন সংসার বাঁধার জন্যে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ছিলাম। তখনও পুরো মাস ধরে আমার বরের হাত থেকে পবিত্র কুরআন মুহূর্তের জন্যেও বিচ্ছিন্ন হয়নি, কারণ সারা মাস ধরে সে সুরাটি মুখস্থ করছিলো।

আমাদের বিয়ের কিছুদিন আগে, সুরাটি মুখস্থ করা শেষে আমার বর বাবাকে সুরাটি শুনাতে আসল। বাবা তাকে বললেন, "যতবার তুমি সুরাটি ভুল করবে ততবারই তুমি আবার শুরু থেকে শুনানো শুরু করবে"

আমার বর তার ধীর ও চমৎকার সুরে সুরাটি তিলাওয়াত করতে শুরু করলো। এত সুন্দর তিলাওয়াত যা আমি জীবনেও কোনদিন ভুলবো না। ও যখন তিলাওয়াত করছিল তখন আম্মু এবং আমি একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর মুচকি হাসছিলাম, আমরা অপেক্ষা করছিলাম কখন আমার বর সুরাটি শুনাতে ভুল করবে আর আমরা আবারো তাঁর তিলাওয়াত প্রথম থেকে শুনতে পেরে সাওয়াবের সংখ্যা বাড়িয়ে নিবো।

কিন্তু আমার বর (আল্লাহ তাঁকে বারাকাহ দান করুন) সুরাটিকে এমন ভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলো যে একটা আয়াতও ও ভুল করেনি।

যখন সে পুরা সুরাটি শুনানো শেষ করলো তখন আব্বু তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, "আজ তোমার কাছে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিলাম, তুমি তোমার মাহার পরিশোধ করেছো এবং তোমার প্রতিজ্ঞাও রেখেছো।

ও আমাকে একটা পয়সাও আর্থিক মাহার দেয়নি, এবং আমরাও দশ হাজার ডলারের গহনা কিনিনাই। ও আমাকে আকদ হিসেবে আল্লাহর কালাম দিয়েই আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। আমি এখন চিন্তা করছি আমার মেয়েটি তার নিজের মাহার হিসেবে কোন সুরাটি কে পছন্দ করবে।

Thursday, June 13, 2013

কালেমা সমুহ

..................কালিমা সমূহ...................

১. কালিমায়ে তাইয়্যেবা :
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই, মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর রাসুল।

২. কালিমায়ে শাহাদাত :
‘আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসুলূহু’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই।
আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স.)
আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।

৩. কালিমায়ে তাওহীদ :
‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহিদাল লা ছানিয়ালাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি ইমামুল মুত্তাক্বীনা রাসুলু রাব্বিল আলামীন।
অর্থ : তুমি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কোন উপাস্য
নেই। তুমি এক, তোমার দ্বিতীয় কেহ নেই।
আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহভীরুদের নেতা ও
বিশ্বপ্রতিপালকের রাসূল।

৪. কালিমায়ে তামযীদ :
“লা ইলাহা ইল্লা আনতা নূ-রাই ইহায়দিয়াল্লাহু লিনূরিহী মাই-ইয়াশাউ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি
ইমামুল মুরসালীনা ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন।”
অর্থ : তুমি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কোন উপাস্য
নেই। তুমি জ্যোতির্ময়, যাকে ইচ্ছা হয়
তাকেই তোমার নূর দ্বারা পথ প্রদর্শণ কর।
মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, রাসুলগণের
নেতা এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।

৫. ঈমানে মুজমাল :
“আ-মানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বিআসমায়িহি ওয়া সিফ জামিয়া’ আহকা-মিহি ওয়া আরকানিহী’
অর্থ : আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাঁর
সমুদয় নামের সহিত ও তাঁহার যাবতীয়
গুণাবলীর সহিত ঈমান আনলাম। আর তাঁর
যাবতীয় আদেশ ও বিধি-বিধান মেনে নিলাম।

৬. ঈমান মুফাছছাল :
“আ-মানতু বিল্লাহি ওয়ামালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লা-হি তায়ালা ওয়াল বা’ছি বা’দাল মাওত।”
অর্থ : আমি বিশ্বাস করলাম আল্লাহর উপর,
তাঁর ফিরিশতাগণের উপর, তাঁর আসমানী কিতাব সমূহের উপর, তাঁর রাসুলগণের
উপর, পরকালের উপর এবং তাকদীরের ভাল-
মন্দের উপর, যা আল্লাহ পাকের নিকট
হতে হয়ে থাকে এবং মৃত্যুর পর পূনরায় জীবিত
হওয়ার উপর।

ইসলাম

اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ اْلاِسْلاَمِ



অনুবাদঃ আল্লাহপাকের নিকট ইসলাম একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইহা কোরআনের শিক্ষা ওরাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম) এর আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম কথাটির একটি অর্থ আত্নসমর্পণ এবং ইহার আর একটি অর্থ শান্তি। এই দুইটি অর্থের মধ্যে পরম্পরের বেশ সংযোগ ও সামঞ্জস্য রহিয়াছে। ইসলামের বিস্তারিত অর্থের ভিতর দিয়া তাহা পরিস্ফুটিত হইয়া উঠিয়াছে। উহার বিস্তারিত অর্থ এই যে, আল্লাহপাক বিশ্ব মানবকে সরল পথে পরিচালিত করিবার জন্য তাঁহার প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে যে ধর্ম প্রচার করিতে পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন তাহার নামই ইসলাম। ইসলামের বিধান সমূহ এতই সুন্দর ও যুক্তিপূর্ন যে, ইহার বিধিনির্দেশগুলি সুষ্ঠুরূপে পালন করিলে মানুষ্য জীবন সার্থক হয়। ন্যায়, পবিত্রতা এবং বন্দেগীর অনাবিল আনন্দে মন প্রাণ ভরিয়া উঠে, দুনিয়া সুখ ও শান্তির ভান্ডারে পরিণত হয়, পরকালে আল-াহপাকের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত বেহেশতে প্রাপ্তি ঘটে।
ইসলাম ধর্মের ভিত্তি মোট পাঁচটি, যথাঃ
১) ঈমান (কালেমা) ২) নামায ৩) রোযা ৪) হজ্জ ৫) যাকাত।

হাদিসের আলোকে ঈদে মিলদুন্নবী

পবিত্র হাদিসের মধ্যে ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতার প্রমান পাওয়া যায় । তম্নধ্য হতে কয়েকটি হাদীস হতে একটি হাদীস শরীফ হচ্ছে-
عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي
͏ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
( ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর )
সুতরাং প্রমানিত হল, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন দ্বারা রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হয় ।
͏   মিলাদ পালন করেছেন নবীজি নিজেই -
عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ   يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-
অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত  রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরেনবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জম্মন গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় ।
(সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
͏  আরো মজার ব্যপার হল আবুলাহাব একজন কাফের হওয়ার পরও  নবীজীর জন্মেরর দিন খুশি হয়ে সে তার সংবাদ দাতা দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দেওয়ার কারনে পরকালে কঠিন আযাবের ভিতরে ও প্রতি সোমবার তার আযাব হালকা করে দেওয়া হয়।
(উল্লেখ্য যে আবু লাহাবের ঘটনা সম্পর্ক হাদিসটি আল্লামা ইবনে জাওযী, আল্লামা কুস্তালানী, আল্লামা জালালুদ্দিন মুয়ূতী সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। )

কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী

এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলেকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম । আল্লাহর এ নেয়ামত ও আনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশ স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে দিয়েছেন ।
যেমন এরশাল হচ্ছেঃ-
قُلْ  بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
আর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তরা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট। সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮
উল্লেখ্য যে, নবীজীর শুভাগমনের চাইতে শ্রেষ্ট নেয়ামত এবং দয়া বিশ্ববাসীর জন্য আর কি হতে পারে ? যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে-
وما ارسلنك إلا رحمة للعالمين
হে রাসূল, নিশ্চই আমি আপনাকে জগতসমুহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি।  (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)
দ্বিতীয় দলীলঃ  আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ-
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاءِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا الِّاَوَّلِنَا وَاَخِرِنَا وَ اَيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ-
আর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দুয়া করলেন, হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ন করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ( বর্তমানে আছে ) এবং যারা পরে, সকলের জন্য  আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়। আর আপনি  আমাদেরকে রিযিক প্রদান করুন বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিযিক প্রদানকারী। (সূরা মায়েদা আয়াত ১১৪)
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা পেলে তা যদি ঈসা (আঃ) এর ভাষায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ হয় তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরমত মহান নেয়ামতে আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান , গুরুত্ববহ, ও আনন্দের তা  সহজেই আনুমেয়।

ফকীহ ও উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ থেকে হাজির-নাজির এর প্রমান

১) সুবিখ্যাত দুররুল মুখতার ৩য় খন্ডের المرتد অধ্যায়ে কারামাতে আওলিয়া শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছেঃ
يَاحَاضِرُ يَا نَاظِرُ لَيْسَ بِكُفْرٍ অর্থাৎ হে হাযির, হে নাযির, বলে সম্বোধন করা কুফর হিসেবে গণ্য নয়। উপরোক্ত উক্তির ব্যাখ্যায় ফতোয়ায়ে শামীতে  উল্লেখিত আছেঃ
فَاِنِّ الْحُضُوْرَ بِمَعْنَى الْعِلْمِ شَائِعٌ مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوى ثَلَثَةٍ اِلَّهُوَرَابِعُهُمْ وَالنَّاظِرُ بِمَعْنَى الرُّوْيَةِ اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرَى فَالْمَعْنى يَاعَالِمُ مَنْيَّرى
অর্থাৎ এর কারণ হলো হুযুর (حضور) শব্দটি জ্ঞান অর্থে বহুল প্রচলিত। কুরআন শরীফে আছেঃ তিন জনের মধ্যে গোপনীয়ভাবে যা কিছু পরামর্শ হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলা ওদেরই চতুর্থজন হিসেবে বিদ্যমান থাকেন । আর نظر নযর শব্দের অর্থ হচ্ছে দেখা। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, কেন, সে জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? সুতরাং, ইয়া হাযিরু! ইয়া নাযিরু! শব্দ দুইটির অর্থ হলো হে জ্ঞানী! হে দ্রষ্টা! অতএব, এ উক্তি কুফর হতে পারে না।
দুররুল মুখতার গ্রন্থে, প্রথম খন্ডের  كيفية الصلوة  শীর্ষক অধ্যায়ে আছেঃ
وَيَقْصِدَ بِاَلْفَاظِ التَّشَهُّدِ الْاِنْشَاءَ كَاَنَّهُ يُحىِّ عَلَى اللهِ وَيُسَلِّمُ عَلَى نَبِيِّه نَفْسِه
অর্থাৎ নামাযে আত্তাহিয়াত বা তাশাহুদ এর শব্দগুলি উচ্চারণ করার সময় নামাযীর এ নিয়ত থাকা চাই যে, কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলছেন, তিনি নিজেই যেন আপন প্রতিপালকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছেন ও স্বয়ং নবী আলাইহিস সালামের প্রতি সালাম আরয করছেন।
এ ইবারতের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছেঃ
اَىْ لَايَقْصِدُ الْاَخْبَارَ وَالْحِكَايَةَ عَمَّا وَقَعَ فِى الْمِعْرَاجِ مِنْهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمِنْ رَّبِّه وَمِنَ الْمَلَئِكَةِ
অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠের সময় নামাযীর যেন এ নিয়ত না হয় যে, তিনি শুধু মাত্র মিরাজের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করে, সে সময় মহাপ্রভু আল্লাহ, হুযুর আলাইহিস সালাম ও ফিরিশতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথোপকথন এর বাক্য গুলোই আওড়িয়ে যাচ্ছেন। বরং তার নিয়ত হবে কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলছেন ।
স্বনামখ্যাত  ফকীহগণের উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে জানা যায় যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে হাযির-নাযির জ্ঞান করা বা বলা কুফর নয়, আর তাশাহুদ পাঠের সময় হুযুর আলাইহিস সালামকে হাযির-নাযির জেনেই সালাম আরয করা চাই। এ তাশাহুদ প্রসঙ্গে ফকীহগণের আরও অনেক বক্তব্য পেশ করা হবে।
সু-প্রসিদ্ধ মজমাউন বরকাত গ্রন্থে শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) বলেছেন- হুযুর আলাইহিস সালাম নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও
আমল সম্পর্কে আবগত এবং তার মহান দরবারে উপস্থিত সকলেই ফয়েয প্রদানকারী ও হাযির-নাযির।
শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) سلوك اقرب السبل بالتوجه الى سيد الرسل নামক পুস্তিকায় বলেন- উলামায়ে উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রকৃত জীবনেই (কোনরূপ রূপক ও ব্যবহারিক অর্থে যে জীবন, তা নয়) স্থায়ীভাবি বিরাজমান ও বহাল তবীয়তে আছেন । তিনি উম্মতের বিশিষ্ট কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ও সেগুলোর প্রত্যক্ষদর্শীরূপে বিদ্যমান তথা হাযির-নাযির। তিনি হকীকত অন্বেষনকারী ও মহান দরবারে নবুয়াতির শরণাপন্নদের ফয়েযদাতা ও মুরুব্বীরূপে বিদ্যমান আছেন।
শাইখ মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) শরহে ফুতুহুল গায়ব গ্রন্থের ৩৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- নবীগণ (আলাইহিস সালামকে) পার্থিব প্রকৃত জীবনেই জীবিত শাশ্বত জীবন সহকারে বিদ্যমান ও কর্মতৎপর আছেন । এ ব্যপারে কারো দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই ।
মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাত এর باب مَايُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَبُ الْمَوْتَ  শীর্ষক অধ্যায়ের  শেষে উল্লেখিত আছেঃ
وَلَاتُبَاعِدُ عَنِ الْاَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِ يَتُ لَهُمُ الْاَرْضُ وَحَصَلَ لَهُمْ اَبْدَ ان ٌمُكْتَسِبَةَ مُتَعَدِّدَةٌ وَجَدُوْ هَا فِىْ اَمَا كِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِىْ اَنٍ وَاحِدٍ
অর্থাৎ ওলীগণ একই মুহূর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারে। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারী হতে পারেন।
শিফা শরীফে আছেঃ
اِنْ لَّمْ يَكُنْ فِىِ الْبَيْتِ اَحَدٌ فَقُلِ السَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةَ اللهِ وَبَرْكَاتُهُ
যে ঘরে কেউ থাকে না সে ঘরে (প্রবেশ করার সময়) বলবেন হে নবী! আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক!
এ উক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বনামখ্যাত মোল্লা আলী কারী (রহঃ) শরহে শিফা গ্রন্থে বলেছেনঃ
لِاَنَّ رُوْحَ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَاضِرٌ فِىْ بُيُوْتِ اَهْلِ الْاِسْلَامِ
কেননা নবী আলাইহিস সালাম এর পবিত্র রূহ মোবারক মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন ।
শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) স্ব-রচিত মদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-হুযুর আলাইহিস সালামকে স্মরণ করুন, তার প্রতি দরুদ পেশ করুন, তার যিকর করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন যেন তিনি আপনার সামনে স্ব-শরীরে জীবিতাবস্থায় উপস্থিত আছেন, আর আপনি তাকে দেখছেন। আদব মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, নিশ্চয় হুযুর পুর নুর আলাইহিস সালাম আপনার কথাবার্তা শুনছেন। কেননা তিনি খোদার গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছে আমি (আল্লহ) আমার স্মরণকারীর সঙ্গে সহাবস্থান করি ।
ইমাম ইবনুল হাজ্জ مدخل গ্রন্থে ও ইমাম কুসতালানী (রঃ) مواهب গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদে زيارة قبره شريف শীর্ষক বর্ণনায় লিখেছেনঃ
وَقَدْ قَالَ عُلَمَاءُ نَالَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِه وَحَيو تِه عَلَيْهِ السَّلَامُ فِىْ مُشَاهِدَ تِه لِاُمَّتِهِ وَمَعرِ فَتِه بِاَحْوَ الِهِمْ وَنِيَّا تِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِ هِمْ وَذلِكَ جَلِىٌّ عِنْدَهُ لَاخَفَاءَبِه
আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে।
মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ-
وَقَالَ الْغَزَ الِىْ سَلِّمْ عَلَيْهِ اِذَا دَخَلْتَ فِى الْمَسْجِدِ
فَاِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَحْضُرُ فِى الْمَسَجِدِ
ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেছেন, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন, তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন। কারণ তিনি মসজিদসমূহে বিদ্যমান আছেন।
কাযী আরায (রহঃ) প্রণীত শিফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসীমুর রিয়ায এর ৩য় খণ্ডের শেষে উল্লেখিত আছে- আম্বিয়ায়ে কিরাম (আলাইহিস সালাম)শারীরিক ও বাহ্যিক দিক থেকে মানবীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন তবে, আভ্যন্তরীণ ও রূহানী শক্তির দিক থেকে ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ কারণেই তাঁরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তসমূহ দেখতে পান, আসমানের চিড়চিড় আওয়াজ শোনেন এবং হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) তাদের নিকট অবতরণের ইচ্ছা পোষণ করতেই তার সুঘ্রাণ পেয়ে যান।
সুপ্রসিদ্ধ দালায়েলুল খায়রাত নামক গ্রন্থের ভূমিকায় উল্লেখিত আছেঃ
হুযুর আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ আপনার থেকে দূরে অবস্থানকারী ও পরবর্তীকালে ধারাদামে আগমনকররীদের দরূদ পাঠ আপনার দৃষ্টিতে কি রকম হবে? ইরশাদ করেনঃ আন্তরিক অকৃত্রিম ভালবাসা সহকারে দরূদ পাঠকারীদের দরূদ আমি নিজেই শুনি এবং তাদেরকেও চিনি । আর যাদের অন্তরে আমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা নেই তাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয় ।
কাযী আরায (রহঃ) এ শিফা শরীফের ২য় খণ্ডে আছঃ-
عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ اِذَ ادَخَلْتُ الْمَسْجِدَ اَقُولُ السَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَاالنَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرْ كَاتُهُ
হযরত আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, যখন আমি মসজিদে প্রবেশ করি তখন বলি হে নবী । (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আপনার প্রতি সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এ হাদীছটির সমর্থন পাওয়া যায় সুবিখ্যাত আবু দাউদ ইবনে মাজা হাদীছ গ্রন্থদ্বয়ের بات الدعاء عند دخول المسجد শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছ থেকেও।
মদারেজুন নবুওয়াত গ্রন্থের ৪৫০ পৃষ্ঠায় ২য় খণ্ডের ৪র্থ ভাগের حيات انبياء  শীর্ষক পরিচ্ছেদে উল্লেখিত আছে- এরপর যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালাম এর পবিত্র শরীরে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন, যে তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেখানে ইচ্ছা করেন সেখানে স্ব-শরীরে বা অনুরূপ কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমন করতে পারেন, কবরের মধ্যে হোক বা আসমানের উপর হোক এ ধরনের কথা সঠিক ও বাস্তবসম্মত। তবে সর্বাবস্থায় কবরের সাথে বিশেষ সম্পর্কে বজায় থাকে।
শাইখ শিহাবুদ্দিন সুহরওয়ার্দী (রহঃ) রচিত সুপ্রসিদ্ধ আওয়ারিফুর মা আরিফ গ্রন্থের অনুবাদ গ্রন্থ মিসবাহুল হিদায়েত এর ১৬৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- অতএব বান্দা যেমন আল্লাহ তাআলাকে সর্বাবস্থায় গুপ্ত ও ব্যক্ত যাবতীয় বিষয়ে অবহিত জ্ঞান করে থাকে, হুযুর আলাইহিস সালামকেও তদ্রূপ জাহিরী ও বাতিনী উভয় দিক থেকে হাযির জ্ঞান করা বাঞ্ছনীয়; যাতে তাঁর আকৃতি বা সুরত দেখার ধারনা, হার-হামিশা তাঁর প্রতি  শ্রদ্ধাবোধ ও তার দরবারের আদব রক্ষার দলীলরূপে পরিগনিত হয়,  বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন দিক থেকে তার বিরুদ্ধাচরনে লজ্জাবোধ হয় এবং তার পবিত্র সহচর্যের আদব রক্ষা করার গৌরব লাভের সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
সু-প্রসিদ্ধ ফিকহ শাস্ত্র বিশারদ ও উলামায়ে উম্মত এর উপরোক্ত উক্তি সমূহ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হল। এখন আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই, একজন নামাজীর নামাজ পড়ার সময় হুজুর আলাইহিস সালাম এর সম্পর্কে অন্তরে কি ধারনা পোষন কর উচিত। এ প্রসঙ্গে আমি অত্র পরিচ্ছেদের প্রারম্ভে সুবিখ্যাত গ্রন্থ  দুররুল মুখতার ও শামী থেকে উদ্ধৃত পেশ করছি। অন্যান্য বুজুর্গানের দ্বীনের আরও কিছু বক্তব্য শুনুন এবং নিজ নিজ ঈমানকে তাজা করুন।
আশআতুল লমআত গ্রন্থের কিতাবুস সালাত এর তাশাহুদ অধ্যায়ে ও মাদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থ ১ম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্টায় ৫ম অধ্যায়ে হুযুর আলাইহিস সালাম এর ফযায়েল এর বর্ণনা প্রসঙ্গে শাইখ আবদুর হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) বলেছেন-
কোন কোন আরিফ ব্যাক্তি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকুম আইয়ুহাননবী বলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের) কে সম্বোধন করার রীতির এ জন্যই প্রচলন করা হয়েছে যে, হাকীকতে মুহাম্মদ্দীয় (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম এর মৌল সও্বা) সৃষ্টিকুলের অনু-পরমানুতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই ব্যাপৃত। সুতরাং হুজুর আলাইহিস সালাম নামাযীগনের সও্বার মধ্যে বিদ্যমান ও হাযির আছেন। নামাযীর এ বিষয়ে সচেতন হওয়া বা এ বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী না হওয়াই বাঞ্চনীয়, যাতে নামাযী নৈকটের নূর লাভে ও মারেফতের গুপ্ত রহস্যাবলী উন্মোচনে সফলকাম হতে পারে।
সুবিখ্যাত ইহয়াউল উলুম গ্রন্থ ১ম খন্ডের ৪র্থ অধ্যায়ে ৩য় পরিচ্ছেদে নামাযের বাতেনী শর্তাবলীর বর্ননা প্রসঙ্গে ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন-
وَلَحْضِرْ فِىْ قَلْبِكَ النَّبِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَشَخْصَهُ الْكَرِيْمُوَقُلْ اَسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَاا لنَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرْكَاتُهُ
নবী আলাইহিস সালাম তথা তার পবিত্র সও্বাকে নিজ অন্তরে হাযির জ্ঞান  করবেন ও বলবেন আসসালামু আলাইকা আইয়ুহাননাবীউ ওয়া রহমতুল্লাহি ওায়া বারাকাতুহু। (হে নবী আপনার উপর শান্তি রহমত ও বরকতের অমৃতধারা বর্ষিত হোক। (মিরকাত গ্রন্থের তাশাহুদ শীর্ষক অধ্যায়েও এ রকম উক্তি বর্ণিত আছে-  مسك الختام  নামক গ্রন্থের ২৪৩ পৃষ্ঠায়ও ওহাবীমতাবলী নবাব সিদ্দিক হুসেন খান ভূপালী সে একই কথা লিখেছেন যা আমি ইতোপূর্বে আশআতুল লমআত এর বরাত দিয়ে তাশাহুদ প্রসঙ্গে লিখেছি যে, নামাযীর তাশাহুদ পাঠের সময় হুযুর আলাইহিস সলামকে হাযির-নাযির জেনেই সালাম করা চাই। তিনি উক্ত গ্রন্থে নিম্নোল্লিখিত দুটি পংক্তি সংযোজন করেছেনঃ-
প্রেমের রাস্তায় দূরের বা কাছের কোন ঠিকানা নেই। আমি তোমাকে দেখি ও দোয়া করি।
আল্লামা শাইখ মুজাদ্দিদ (রহঃ) বলেনঃ-
নামাযে হুযুর আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা যেন এ কথারই ইঙ্গিত বহ যে, আল্লাহ তার হাবীবের উম্মতদের মধ্যে নামাযীদের অবস্থা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম) এর কাছে এমনভাবে উদ্ভাসিত করেছেন, যেন তিনি তাদের মধ্যে উপস্থিত থেকেই সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন, তাদের আমল সমূহ অনুধাবন করছেন। এ সম্বোধনের আরও একটি কারণ হচ্ছে তার এই উপস্থিতির ধারনা অন্তরে অতিমাত্রায় বিনয় ও নম্রভাব সৃষ্টি করে।
হাযির-নাযির এর এ মাসআলার সহিত ফিকাহ শাস্ত্রের কয়েকটি মাসায়েলের সমাধানও সম্পৃক্ত। যেমন ফকীহগণ বলেন স্বামী যদি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে থাকে আর স্ত্রী রয়েছে পশ্চিম প্রান্তে। এমতাবস্থায় স্ত্রী একটি স্ন্তান প্রসব করল এবং স্বামী সেই শিশুটি তার বলে দাবী করল। তাহলে শিশুটি তারই সাব্যস্ত হবে। কারণ স্বামী আল্লাহ ওলী হতে পারেন এবং কেরামতের বদৌলতে স্ত্রীর কাছে পৌছতে পারেন। ফতওয়ায়ে শামী ২য় খণ্ডের ثبوت النسب অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।
ফতওয়ায়ে শামী ৩য় খণ্ডের অধ্যায়ে কারামাতে আওলিয়া বিষয়ক র্ব্ণনায় উল্লেখিত আছেঃ
এ দূরত্ব অতিক্রম করাটা সে একই কেরামতের অন্তর্ভুক্ত। এটা এজন্য সম্ভবপর যে হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেছেন, আমার জন্য পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়েছিল। এতে ফকহিগণের নিম্নোক্ত মাসআলাটিরও সমাধান হয়ে যায়। মাসআলাটি হলঃ পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত অবস্থানকারী কোন ব্যাক্তি যদি পশ্চিম প্রান্তে অবস্থানকারী কোন মহিলাকে বিবাহ করেন এবং সে স্ত্রীর সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে শিশুটি উক্ত স্বামীর বলে গণ্য হবে। তাতারখানিয়া নামক গ্রন্থে আছে যে, এ মাসআলাটিও কেরামত এর বৈধতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
সে একই জায়গায় শামীতে আরও  উল্লেখিত আছেঃ
সেটাই যা ইমাম নাসাফী (রহঃ) একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কথিত আছে যে কাবা শরীফ কোন এক ওলীর সহিত সাক্ষাত করার জন্য গমনাগমন করে-এ কথ বলাটা জায়েয হবে কিনা? এর উত্তরে তিনি বলেছেন আওলিয়া কিরামের দ্বারা কেরামত হিসেবে   অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমধর্মী কার্যাবলী সম্পাদন আহলে সুন্নাতের  মতে জায়েয।
এ উদ্ধৃতি থেকে জানা গেল যে, পবিত্র কাবা মুয়াজ্জমাও আওলিয়া কিরামের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে ঘুরাঘুরি করে থাকে ।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে সুরা মুলক এর শেষে উল্লেখিত আছেঃ
قَالَ الْاِمَامُ الْغَزَالِىُّ وَالرَّسُوْلُ عَلَيْهِ السَّلَامَ لَهُ الْخِيَارُ فِيْ طَوَ افِ الْعَالَمِ مَعَ اَرْوَاحِ الصَّحَابَةِ لَقَدْرَاَهُ كَثِيْرٌ مِنَ الْاَوْلِياءِ
ইমাম গাযযালী বলেছেন সাহাবায়ে কিরামের রূহসমেত হুযুর আলাইহিস সালামের জগতে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে, বিধায় অনেক আওলিয়া কিরাম তাকে দেখেছেন।
انتباه الاذكياء فى حياة الاولياء নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা জালালুদ্দিন সয়ুতী (রহঃ) বলেন-
উম্মতের বিবিধ কর্ম-কাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা তাদের পাপরাশির ক্ষমা প্রার্থনা করা তাদেরকে বালা মাসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশ গ্রহণ এগুলোই হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালাম এর সখের কাজ। কোন  কোন হাদীছ থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।
ইমাম গাযযালী (রহঃ) المنقذمن الضلال নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ-
ঐশী নূরে আলোকিত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ জাগ্রত অবস্থায় নবী ও ফিরিশতাগণকে দেখতে পান, তাদের সাথে কথাবার্তাও বলেন। সয়ুতী (রহঃ) বলেন,
اِنِ اعْتَقَدَالنَّاسُ اَنَّ رُوْحَهُ وَمِثَالَهُ فِىْ وَقْتِ قْتِ قِرَاءَةِ الْمَوْلِدِ وَخَتْمِ رَمْضَانَ وَقِرَ اءَةِ الْقِصَائِدِ يَحْضُرُ جَازَ
যদি কেউ বিশ্বাস পোষণ করে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র রূহ মোবারক ও তার জিসমে মিছাল মীলাদ পাঠের সময়, রমযানে খতমে কুরআনের সময় এবং নাত পাঠ করার সময় উপস্থিত হন, তবে এ বিশ্বাস পোষণ করা জায়েয।
মওলবী আবদুল হাই সাহেব তার রচিত  تر اويح الجنان بتشر يح حكم شرب الدخان নমক রিসালায় লিখেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি নাত পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে নবী করীম আলাইহিস সালাম তাকে বলছেন যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর তখন আমি মাহফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয় তখন কালবিলম্ব না করে মাহফিল থেকে ফিরে যাই।
এসব উদ্ধৃতি থেকে  প্রতীয়মান হল যে, জগতের অণু-পরমাণুর প্রতিও হুযুর আলাইহিস সালাম ও সার্বক্ষণিক দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে। আর, নামায, তিলাওয়াত কুরআন, মাহফিলে মীলাদ শরীফ ও নাত পাঠের মাহফিলে বিশেষ করে পুণ্যাত্মাদের নামাযে জানাযায় স্ব-শরীরে তিনি তাশরীফ আনয়ন করে থাকেন।
তাফসীরে রূহুল বয়ান ২৬ পারা সুরা ফতহ এর اِنَّا اَرْ سَلْنكَ شَاهِدًا আয়াত এ  ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ- যেহেতু হুযুর আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, সেহেতু তিনিই আল্লাহর একত্বের সাক্ষী, সে সব বস্তুরও অবলোকনকারী, যেগুলি অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বের সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে এসেছে। যেমন মানবাত্মা, জীবাত্মা শারীরিক কাঠামো, খনিজ পদার্থ, বৃক্ষরাজি, পশু-পক্ষী, ফিরিশতা, মানুষ ইত্যিাদি। সুতরাং খোদা তাআলার সেসব গুপ্ত ভেদ ও বিস্ময়কর ব্যাপারগুলোও যেগুলির রহস্য উন্মোচন অন্য কোন মাখলুকের জন্য সম্ভবপর নয়, তার কাছে রহস্যাবৃত ও অনুদঘাটিত থাকার কোন অবকাশ থাকে না। সে একই জায়গায় আরও কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বলা হয়েছেঃ-
তিনি দেখেছেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টি তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ভুলের কারণে বেহেশত থেকে তার অপসারণ এবং পরে তার তওবা গৃহীত হওয়ার যাবতীয় ঘটনাবলী। শেষ পর্যন্ত সেই আদম আলাইহিস সালামকে কেন্দ্র করে যা কিছু আবর্তিত হয়েছে সবই তিনি  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখেছেন। তিনি আরো দেখেছেন শয়তানের সৃষ্টি ও যা কিছু তাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এ থেকে বোঝা গেল যে দৃশ্যমান জগতে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) অভিব্যক্তির পূর্বেই প্রত্যেক ব্যক্তি ও বস্তুর যাবতীয় অবস্থা তিনি অবলোকন করেছেন।
আরও কিছু দূর অগ্রসর হয়ে উক্ত রূহুল বয়ানের স্বনামধন্য লেখক সে একই বর্ণনায় আরও বলেছেনঃ-
কোন কোন বুযুর্গানে দ্বীন বলেন প্রত্যেক পুণ্যাত্মার সাথে হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র রূহ মোবারক অবস্থান করে। رقيب عنيد শব্দদ্বয় দ্বার ইহাই বোঝানো হয়েছে, যে সময় রূহে মুহাম্মাদীর স্থায়ী তাওজ্জুহ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে অন্যত্র সরে গেল তখনই তিনি ভুল করে বসলেন এবং তার ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়েছে। একটি হাদীছে উল্লেখিত আছে যে,  যখন কোন ব্যভিচারকারী অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তখন তার নিকট থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। উক্ত তাফসীরে রূহুল বয়ানে এজায়গায় বলা হয়েছে, এখানে ঈমান বলতে হুযুর পাকের দৃষ্টিকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে মুমিনবান্দা কোন ভাল কাজ করেন তা হুযুর আলাইহিস সালাম এর কৃপা দৃষ্টির বরকতেই সম্পন্ন করেন। যে পাপ কাজ করে হুযুরের দৃষ্টি অপসারণের ফলশ্রুতিতে সেই পাপ কর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে।
এ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়াটি  সুন্দনভাবে প্রতিভাত হল।
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) স্বরচিত কসিদায়ে নুমান নামক  প্রশংসা মূলক কাব্যগ্রন্থে বলেছেনঃ
وَاِذَاسَمِعْتُ فَعَنْكَ قَوْ لًا طَيِّبًا – وَاِذَانَظَرْتُ فَلَااَرَى اشلَّاكَ
অর্থাৎ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে বলছেন হে নবী! যখনই আমি কিছু শুনি শুধু আপনার প্রশংসাই শুনি আর যখন কোনদিকে তাকাই তখন আপনি ছাড়া আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় না।
ইমাম সাহেব (রহঃ) কুফাতে অবস্থান করে চারিদিকে হুযুর আলাইহিস সালামকে দেখতে পান । -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-

ভিন্নমতাবলম্বীদের রচিত পুস্তকসমূহ থেকে হাযির নাযির এ প্রমাণ

তাহযিরুন্নাস কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব বলেন আয়াত اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْ مِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বাসী লোকদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়ে নিকটত]এর مِنْ اَنْفُسِهِمْ অংশটুকুর শব্দ বিন্যাস ও ব্যবহৃত অন্বিত অব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, উম্মতের সাথে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এমন নৈকট্যের সম্পর্ক আছে যে, তাদের প্রাণের সাথেও সেরূপ নৈকট্য নেই। কেননা উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত اَوْلَى শব্দটির অর্থ হচ্ছে নিকটতর। মওলবী ইসমাইল দেহলবী রচিত সিরাতে মুস্তাকীম গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠার তরজুমার চতুর্থ হিদায়েত ইশকের বর্ণনায় আগুন ও কয়লার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে এভাবে, যখন খোদা অন্বেষী সাধকের পূর্ণতাপ্রাপ্ত আত্মাসত্ত্বাকে রহমানী আকর্ষণ ও ভাবাবেশের তরঙ্গমালা আহাদিয়াত এর সমুদ্র সমূহের গভীরে টেনে নিয়ে যায় তখন আনাল হক ও আমার জুবানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু নেই প্রভৃতি বাক্য  সে সাধকের মুখ থেকে নির্গত হতে থাকে। সাধকের এ অবস্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে হাদীছে কুদসীতে যেখানে বলা হয়েছে-
كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِه وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يَبْصُرُ بِه
(আমি সে প্রিয় বান্দার কান হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি শুনেন, তার চোখ হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি দেখেন। এ  ইবারতে একথা স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে যে, মানুষ যখনিই ফানাফিল্লাহ এর স্তরে উপনীত হয় তখন সে খোদার শক্তিতেই দেখে, শুনে, ধরে ও কথা বলে। অর্থাৎ জগতের প্রত্যেক কিছুই দেখে, দূরের ও নিকটের যাবতীয় কিছু স্পর্শ করে। এটিই হচ্ছে হাযির-নাযির এর অর্থ। যখন সাধারণ মানুষ ফানাফিল্লাহ এর স্তরে গিয়ে মর্যাদার এরূপ আসনে অধিষ্ঠিত হয়, তাহলে জীন ও মানব জাতির সর্দার আলাইহিস সালাত ওয়াসাল্লাম যার ফনাফিল্লাহের স্তরে অন্য কেউ উপনীত হতে পারে না, সর্বোচ্চ  স্তরের হাযির-নাযির হবেন বৈকি।
ইমদাদুস সুলুক নামক গন্থের ১০ পৃষ্ঠায় মওলবী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহী লিখেছেনঃ- মুরীদের এও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে পীরের রূহ মোবারক এক জায়গায় আবদ্ধ নয়। মুরীদ দূরে বা নিকটে যেখানে হোক না কেন, এমনকি পীরের পবিত্র শরীর মোবারক থেকে দূরে হলেও পীরের রূহানিয়ত কিন্তু দূরে নয়। যখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেলে তখন পীরকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখতে হবে যাতে তার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রকট হয়ে উঠে এবং মুরীদ এ উপকারিতা লাভে ধন্য হতে থাকে। মুরীদ যে অবস্থার সম্মুখীন হয় সে অবস্থায় পীরের মুখাপেক্ষী থাকে। পীরকে আপন অন্তরে হাযির করে স্বীয় অবস্থার মাধ্যমে পীরের নিকট লক্ষ্য বস্তুর প্রার্থী হতে হবে। আল্লাহর হুকুমে পীরের রূহ মোবারক পার্থিব বিষয়টি মুরীদের অন্তরে অবশ্যই ইলকা করবেন। কিন্তু এর জন্য শর্ত হচ্ছে পীরের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। পীরের সহিত সম্পর্কের কারণেই অন্তর বাক্যময় উঠে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তাকে ইলহাম প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন করে।
এ ইবারতে নিম্ন লিখিত কথা কয়টি স্পষ্টরূপে পাচ্ছেঃ
১) মুরীদের কাছে পীরের হাযির-নাযির হওয়।
২) পীরের ধ্যানে মুরীদের রত থাকা।
৩) পীরের হাজত পূরণের ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া
৪) খোদাকে বাদ দিয়ে মুরীদের প্রার্থিত বিষয়ে পীরের কাছে প্রার্থী হওয়া।
৫) মুরীদের অন্তরে প্রর্থিত বিষয়ে পীরের সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি করা।  ও
৬) পীর মুরীদের দিল জারী করে দেওয়া।
পীরের মধ্যে যখন এসব শক্তি নিহিত রয়েছে, তখন মানবজাতি ও ফিরিশতাদের মুর্শিদদেরও যিনি মুর্শিদ, তাঁর মধ্যে এসব গুনাবলী স্বীকার করা শিরক হয় কি করে? উল্লেখিত ইবারতটুকু ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পূর্ণ মতাদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। আল্লাহর শুকরিয়া যে সম্পূর্ণ তকবীয়াতুল ঈমান এখানেই খতম হয়ে গেল।
হিফযুল ঈমান নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মওলবী আশরাফ আলী সাহেব লিখেছিনঃ
অতি অল্প সময়ে  পৃথিবী পরিভ্রমণ সম্পর্কে আবু ইয়াযিদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন এটি কোন পূর্ণতা জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য নয়। দেখুন ইবলীস পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নিমেষেই অতিক্রম করে।
এ ইবাদতে এ কথাটুকুই স্পষ্টরূপে স্বীকার করা হয়েছে যে, কোন কোন সময় পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্তে পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহওয়ালাদের জন্য সম্ভব পর নয় বরং কাফির ও শয়তানদের পক্ষে ও এরূপ দুরূহ কাজ সম্ভবপর এবং হতেই আছে। হাযির-নাযির শব্দদ্বয় দ্বারা এ কথাটুকুই বোঝানো হয়। তকবীয়াতুল ঈমান এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা শিরক বটে।


নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁ ভূপালী ওহাবী রচিত মিসকুল খেতাম গ্রন্থের উদ্ধৃতি হাযির-নাযির এর প্রমাণেও (অত্র অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ) পেশ করেছি। তিনি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্যই সম্বোধন করা হয় যে, তিনি জগতের কনায় কনায় বিদ্যমান। নামাযীর সত্ত্বার মাঝে হাযির ও বিরাজমান।
উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুচারুরূপে প্রতিপন্ন হল।